ভারত সরকার অভ্যন্তরীণ চাহিদা সামাল দিতে রবিবার থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। যার প্রভাবে দেশে পেঁয়াজের বাজার উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। প্রায় সবখানে দাম কেজি প্রতি ১০০ টাকার ওপরে উঠে যায়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার মঙ্গলবার থেকে টিসিবির মাধ্যমে ৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সাথে বাণিজ্য সচিব বলেন, সরকারের কাছে যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুদ আছে। দাম বৃদ্ধি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যতদিন বাজারে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল না হবে ততদিন ট্রাকে করে বিক্রি করবে টিসিবি।
সেই সাথে সরকার মিয়ানমার, তুরস্ক ও মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয়। এরই মধ্যে বিদেশ থেকে একটি চালান রবিবার চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছে। কিন্তু বাজারে এসব পদক্ষেপের প্রভাব পড়েছে খুব কমই।
খুলনায় সোমবার থেকে পণ্য বিক্রি শুরু করে টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয়। তারা তিনটি ট্রাকের মাধ্যমে ৯টি পয়েন্টে বিক্রি করছে চিনি, মসুর ডাল ও সয়াবিন তেল। চিনি ও মসুর ডাল কেজি প্রতি ৫০ এবং সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ৮৫ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু এসব পণ্যের প্রতি তেমন আগ্রহ নেই ক্রেতাদের। অনেকে পেঁয়াজের খোঁজে এসে ফিরছেন খালি হাতে।
নগরীর ময়লাপোতা মোড়ে রিকশাচালক জসীম সরকার বলেন, ‘সারা বছর তো চিনি, ডাল আর তেল বিক্রি করা হয়। শুনলাম এখন পেঁয়াজ বিক্রি করবে, তাই কিনতে এসেছি। কই পেঁয়াজের তো কোনো হদিস নেই।’
নিরালা আবাসিক এলাকার জয়তুন বেগম অন্যের বাড়ির কাজ রেখে টিসিবির ট্রাক ধরতে পারলেও পাননি ন্যায্যমূল্যের পেঁয়াজ। ‘পেঁয়াজ ছাড়া তরকারি রান্না করার মতো অবস্থা। কিন্তু টিসিবিতে কোনো পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে না।’
খুলনা টিসিবির প্রধান রবিউল মোর্শেদ বলেন, এখানে পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে কি না তা তিনি জানেন না। তবে ঢাকায় বিক্রির পরে খুলনায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিক্রি ৬ তারিখে শেষ হবে।
এদিকে, তিন দিনের ব্যবধানে নগরীর খুচরা বাজারগুলোতে কেজি প্রতি দেশি পেঁয়াজ ২৫ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশি পেঁয়াজ ১২০ ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ রবিবার এ দাম ছিল যথাক্রমে ৯০ থেকে ৯৫ এবং ৭০ থেকে ৭৫ টাকা।
নগরীর বড় বাজারের তানভীর বাণিজ্য ভাণ্ডারের মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ভারত পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দেয়ায় দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে, মেসার্স তাজ ট্রেডিংয়ের কর্মী শহিদুল ইসলাম জানান, তাদের বেচাকেনাও একেবারে কমে গেছে।
মেসার্স ফরাজী ট্রেডিংয়ের মালিক আমদানিকারক মো. মিলন ফরাজী বলেন, খুলনায় প্রতিদিন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে ২০ ট্রাক। অথচ সেখানে রবিবার আমদানি হয়েছে মাত্র তিন ট্রাক বা ৬০ টন। সোমবার কোনো পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। অধিকাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পেঁয়াজ কিনছেন না বলেও জানান তিনি।